ইতিহাসের কালের স্বাক্ষী হরিপুর জমিদার বাড়ি – অযত্নে অবহেলায় বিলুপ্তীর পথে
আয়েশা আহম্মেদ লিজা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ইতিহাসের কালের স্বাক্ষী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগরের হরিপুর জমিদার বাড়ি-( রাজবাড়ি) টি অযত্নে অবহেলার কারনে ঐতিয্য বিলুপ্তীর পথে। ঐতিহাসিক গনেরমতে প্রায় ১৭৫ বছর পূর্বে জমিদার গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরী ও কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী বাড়িটি নিমার্ণ করেন। বৃটিশ শাসনামলে নির্মিত বাড়িটির নিমার্ণ শৈলী বড়ই মনোরম। ১৩৪৩ বাংলার ১২ চৈত্র (দোল পূর্নিমা) তারিখে কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরীর মৃত্যুর পর পর্যায়ক্রমে বাড়িটির উত্তরাধিকার হন হরিপদ রায় চৌধুরী ও শান্তি রায় চৌধুরী। তাদের কাছ থেকে বাড়ির মালিকানা ও জমিদারি আসে উপেন্দ্র রায় চৌধুরী ও হরেন্দ্র রায় চৌধুরী। কালক্রমে ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্ত হওযার পর জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ হলে তারা বাড়িটি ফেলে কলকাতায় চলে যান। জমিদাররা বাড়িটি ফেলে যাওয়ার সময় পুরোহিতদের রেখে যায়। এখনও জরাজীর্ণ জমিদার বাড়িতে পুরোহিতদের বংশধরেরা বসবাস করছে। অযত্নে অবহেলার কারনে বাড়িটির দেয়ালের অধিকাংশ পলেস্তারা খসে পড়ছে,আর সেখানে জমেছে শেওলার আবরণ, ভুই-শৈবালের বালখিল্লতায় বাড়িটির পুর্বরুপ বিবর্ণ প্রায়। নান্দনিক কারুকাজের খুব অল্পকিছু অংশই বিলীন হতে বাকি আছে। জনশ্রুতি আছে, মেঘনা তথা তিতাসের পূর্বপ্রান্তে এত বড় বাড়ি আর কোথাও নেই। তাই দুর থেকে এই বাড়িটি ভারতের আগ্রার তাজমহলের মত মনেহত। প্রায় ৪৮০ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত তিনতলা জমিদার বাড়িটিতে প্রায় ৬০টি কক্ষ,রং মহল,দরবার হল,ধানের গোলা,গোয়ালঘর, রান্নার ঘর,নাচ ঘর, মল পুকুর,খেলার মাঠ,মন্দির ও সীমানা প্রাচীর রয়েছে। বিশাল আয়তনের বাড়িটির পুরো ভবনের কোথাও কোন রডের গাঁথুনি নেই। লাল ইট সুরকির গাঁথুনি দিয়ে তৈরি ভবনের দুপাশে দুটি সুউচ্চ গম্বুজ স্বগর্বে মাথা তুলে দাড়িঁয়ে ঘোষনা করছে, জমিদার বংশের ঐতিহ্যের কথা। দু’তলায় উঠার ৬ দিকে ৬টি সিড়িঁ ও তিন তলায় উঠার ২ দিকে ২টি সিঁড়ি রয়েছে। বাড়তি পশ্চিম-উত্তর কোণে ৬টি বেড রুম এবং মল পুকুরের পূর্বপাড়ে ৪টি ও পশ্চিম পাড়ে ৪টি বেড রুম রয়েছে। বাড়ির পশ্চিম দিকে তিতাস নদীর পাড়ে পাকা ঘাটলার উত্তর দিকে কৃষ্ণ প্রসাদ রায় চৌধুরী ও দক্ষিণ দিকে গৌরী প্রসাদ রায় চৌধুরীর সমাধি মঠ রয়েছে ।
হরিপুর গ্রামে তিতাস নদীর পূর্বপ্রান্তে হরিপুর জমিদার বাড়ি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিতাস নদীর তীরে এ ঐতিহ্যবাহী রাজবাড়ি। জন স্রুতি আছে যে এ বাড়িটিকে কেউ বলে রাজবাড়ি, বড়বাড়ি আবার কেউ বলে জমিদার বাড়ি।
নাসিরনগর থেকে মাধবপুর যাওয়ার পথে উপজেলার শেষ সীমান্তে হরিপুর গ্রামের রাস্তার পশ্চিম পাশে তিতাস নদীর পাড়ে চোখে পড়ার মত দুই গম্বুজের তিনতলা সুবিশাল বাড়িটি। বাড়িটির পূর্ব পাশে নাসিরনগর-মাধবপুর সড়ক। বাকি দিকে তিতাস নদীর ফাঁকা জায়গা। অনেক বড় বারান্দা ডিঙিয়ে মূল বাড়ি। নান্দনিক স্থাপত্য শৈলিতে নির্মিত বাড়িটি সরেজমিনে দেখা যায়,বাড়ির বাইরের অবয়বটি অবিকল রযে গেছে। কারুকাজ খচিত দেয়াল,স্তম্ভ ও কার্নিশ। সব কয়টি কক্ষেরই পুরানো সেই দরজা নেই। বর্তমানে বসবাসকারীরা সাধারণ মানের দরজা লাগিয়ে বসবাস করছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০ টি পরিবার রয়েছে এখানে।
বাড়িটি দেখার জন্য এখনও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্তি বনভোজনে আসেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে তিতাসের বুকে যখন পানি থৈ থৈ করে তখন বাড়িটির সৌন্দর্য আরো বেড়ে যায়। বাড়িটিতে সংস্কারের ছোঁয়া লাগেনি কখনো। দিনকে দিন বাড়িটি সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। এক সময়ে ঐতিহ্যবাহি নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা হরিপুর জমিদার বাড়ির নদীর ঘাট থেকেই শুরু হত। এ বাড়িতে পুর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি মধুমালতি, ঘেটুপুত্র কমলা এবং নাইওরী সহ অনেক ছবি চিত্রায়িত হয়েছে।
আশার বানী হলো প্রাচীন এই জমিদার বাড়িটির সংস্কার কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। সংস্কার কার্য সম্পন্ন হলে বাড়িটি তার পুর্ব রুপ ফিরেপাবে। ফলে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।