সোমবার রাত ১০:৪০, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

মুশফিকের সেঞ্চুরিতে লড়াই করে হারলো বাংলাদেশ

বিভাগ খেলা, 21 June, 2019.

স্পোর্টস রিপোর্ট: শুরুতে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া যখন ৩৮২ রানের টার্গেট ছুড়ে দিল, অনেকে ভেবেছিলেন ম্যাচটা হয়ত তখনই হেরে গেছে বাংলাদেশ। কিন্তু জবাব দিতে নেমে টাইগারদের শুরুটা কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত লড়াই উপহার দিল ভালোই। হারের ব্যবধান ৪৮ রানের হলেও ৩৩৩ রান কোনো অংশেই ছোট স্কোর নয়। এটাই ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর। উইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৩০ রান ছিল আগের রেকর্ড। দুই দল মিলে করলো ৭১৪ রান, যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

মুশফিকের সেঞ্চুরি, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ঝড়ো ফিফটি আর তামিমের ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত মিলিয়ে এই ম্যাচ থেকে চাইলে ব্যাটিং থেকে অনেক ইতিবাচক বিষয় খুঁজে নিতে পারে বাংলাদেশ। এই ম্যাচে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৭ম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন বাংলাদেশের মুশফিকুর। রিয়াদ আর সাকিবের পর তৃতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন এই ডানহাতি।

অজিদের পাহাড়সম টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে দলীয় ২৩ রানেই ওপেনার সৌম্য সরকারের উইকেট হারায় বাংলাদেশ। দুই ওপেনার তামিম-সৌম্য উইকেটে থিতু হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু প্যাট কামিন্সের করা চতুর্থ ওভারে অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হয়ে ফিরেছেন টাইগার ওপেনার সৌম্য সরকার। মূলত তামিম আর সৌম্য’র ভুল বোঝাবুঝিতেই এই সর্বনাশ।

সৌম্য’র বিদায়ের পর ক্রিজে এসে তামিমের সঙ্গে ৭৯ রানের জুটি গড়েন সাকিব। কিন্তু অল্পের জন্য আরও একটি পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস থেকে ৯ রান দূরত্বে থাকতে অজি পেসার মার্কাস স্টইনিসের বলে ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তার ৪১ বলের ইনিংসটি ঠিক ৪১ রান পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

চলতি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটির দেখা পাওয়ার পর বেশ ভালোই খেলছিলেন তামিম ইকবাল। কিন্তু অজি ফাস্ট বোলার মিচেল স্টার্কের দ্রুতগতির বল তার ব্যাটের কানায় লেগে ষ্ট্যাম্প ভেঙে দিলে শেষ হয় তামিমের ৭৪ বলে ৬২ রানের ইনিংসটি। এই ইনিংস ৬ বাউন্ডারিতে সাজানো। তামিমের পর লিটন দাস (২০) বিদায় নেন অ্যাডাম জাম্পার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে। তবে এরপর আসল লড়াই উপহার দেন মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তুলে নিয়েছিলেন নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২১তম ফিফটি। তবে সেখানেই থেমে থাকেননি। তার ব্যাট কথা বলেই যাচ্ছিল। কিন্তু নাথান কোল্টার-নাইলের করা ইনিংসের ৪৬তম ওভারে প্যাট কামিন্সের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন রিয়াদ। বিদায়ের আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৫০ বলে ৬৯ রানের ইনিংস।

রিয়াদের বিদায়ের পর ক্রিজে এসে মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে ফিরে যান চলতি বিশ্বকাপে এই প্রথম সুযোগ পাওয়া সাব্বির রহমান। জেতার সম্ভাবনা আসলে সেখানেই শেষ হয়ে যায়। বাকি ছিল শুধু মুশফিকের সেঞ্চুরি। সেটাও পেয়ে গেছেন তিনি। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৭ম সেঞ্চুরি। ৯৫ বলে ৯ চার ও ১ সাজানো এই ইনিংস। শেষ পর্যন্ত মুশফিক অপরাজিত থাকলেও ৩৩৩ রানেই থামে বাংলাদেশের ইনিংস।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ২টি করে উইকেট পেয়েছেন মিচেল স্টার্ক, কোল্টার-নাইল ও স্টইনিস। বাকি উইকেট জাম্পার।

নটিংহ্যামে ২০ জুন বৃহস্পতিবার টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেয় অস্ট্রেলিয়া। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের বোলারদের উপর রীতিমত বুলডোজার চালিয়েছেন অজি ব্যাটসম্যানরা। বিশেষ করে ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। ১৪৭ বলে ১৬৬ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংস খেলার পথে তিনি হাঁকিয়েছেন ১৪টি বাউন্ডারি ও ৫টি ছক্কা। এই ইনিংস এখন পর্যন্ত চলতি বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ ইনিংস। এছাড়া সাকিবকে ছাড়িয়ে তিনিই এখন এই বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক (৪৪৭)।

ওয়ার্নার ছাড়াও অধিনায়ক ফিঞ্চের ৫১ বলে ৫৩ রানের ইনিংস আর উসমান খাজার ৭২ বলে ৮৯ রানের ইনিংস দুটি অজিদের বিশাল সংগ্রহ এনে দিয়েছে। এছাড়া গ্ল্যান ম্যাক্সওয়েলের ১০ বলে ৩২ রানের ইনিংসটিও রেখেছে বড় ভূমিকা। ৫ উইকেট হারিয়ে পাওয়া ৩৮১ রানের এই স্কোর অজিদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৫ বিশ্বকাপে আফগানদের বিপক্ষে ৪১৭ রান বিশ্বকাপে তাদের সেরা স্কোর, যা আবার বিশ্বকাপ ইতিহাসেরও সর্বোচ্চ।

বল হাতে টাইগার বোলারদের মধ্যে সেরা বোলিং করেছেন সৌম্য সরকার। ৮ ওভারে ৫৮ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন এই পার্ট-টাইম বোলার। ১ উইকেট ঝুলিতে পুরলেও ৯ ওভারে ৬৯ রান খরচ করেছেন মোস্তাফিজুর রহমান। ৮ ওভারে ৫৬ রান খরচ করে উইকেটশুন্য মাশরাফি। মেহেদি হাসান মিরাজ ১০ ওভারে ৫৯ রান খরচ করেছেন।

যাকে দলে নিতে এতদিন ব্যাপক আলোচনা হচ্ছিল সেই রুবেল হোসেন ৯ ওভারে দিয়েছেন ৮৩ রান। রান খরচ করেছেন ওভার পিছু ৯.২২ করে। সাকিব ৬ ওভারে দিয়েছেন ৫০ রান। অর্থাৎ, বল হাতে রান খরচের ক্ষেত্রে সব বোলারই ব্যর্থ।

ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার।

এই জয়ে ৬ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে উঠে এলো অস্ট্রেলিয়া। আর ৬ ম্যাচে ৫ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানেই আছে বাংলাদেশ।