ভারতকে হারিয়ে সিরিজ বাংলাদেশের
স্পোর্টস রিপোর্টঃ ঘরের মাটিতে ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ভারতকে ৫ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ নিজেদের করে নিলো বাংলাদেশ। ৭ ডিসেম্বর বুধবার মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে মিরাজের সেঞ্চুরিতে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৭১ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। শেষ দিকে রোহিতের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে জয়ের পথেই ছিল ভারত। শেষ বলে জয়ের জন্য ৬ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। তবে শেষ বলে এক রান দিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করে মোস্তাফিজ।
২৭২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারায় ভারত। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে বিরাট কোহলিকে বোল্ড করে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দেন পেসার এবাদত হোসেন। দলীয় ৭ রানে ৬ বলে মাত্র ৫ রান করে আউট হন কোহলি। এরপর দলীয় ১৩ রানে বাংলাদেশকে দ্বিতীয় সাফল্য এনে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ১৩ রানে ওপেনার শিখর ধাওয়ানকে ফেরান তিনি। ১০ বলে ৮ রান করে সাজঘরে ফিরে যান ধাওয়ান।
সুন্দরের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন লোকেশ রাহুল। রাহুলকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামত করার চেষ্টা করেন আইয়ার। তবে দলীয় ৬৫ রানের মাথায় আবারও উইকেট হারায় ভারত। এবার বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন মেহেদী মিরাজ। ২৪ বলে ১৪ রান করা লোকেশ রাহুলকে সাজঘরে ফেরান তিনি।
রাহুলের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন অক্ষর প্যাটেল। এক প্রান্তে উইকেট হারালেও অন্যপ্রান্তে সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকে ওয়ান ডাউনে নামা শ্রেয়াস আইয়ার। নিজের সাবলীল ব্যাটিংয়ে তুলে নেন নিজের অর্ধশতক। অক্ষর প্যাটেলকে সঙ্গে নিয়ে শুরুর বিপর্যয় সামাল দেন তিনি। অক্ষর প্যাটেল ও আইয়ারের শক্ত জুটিতে ম্যাচে ফেরে ভারত। দুজন মিলে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ১০১ বলে ১০৭ রানের জুটি গড়েন। দু’জন মিলে ভারতকে জয়ের স্বপ্ন দেখাতে থাকেন।
তবে ইনিংসের ৩৫তম ওভারে এসে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন মেহেদী মিরাজ। দলীয় ১৭২ রানে মেহেদীকে ছক্কা মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে আফিফের হাতে ধরা পড়েন শ্রেয়াস আইয়ার। ১০২ বলে ৮২ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলে সাজঘরে ফিরে যান আইয়ার।
আইয়ারের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন শার্দুল ঠাকুর। তাকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাটিং চালিয়ে যান প্যাটেল। ৫০ বল খেলে তুলে নেন নিজের অর্ধশতক। তবে অর্ধশতক করার পরেই সাজঘরে ফিরে যান অক্ষর প্যাটেল। দলীয় ১৮৯ রানে ৫৬ বলে ৫৬ রান করে আউট হন তিনি। এবাদতের বলে সাকিবের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান তিনি। পর পর দুই উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফিরে বাংলাদেশ।
অক্ষর প্যাটেলের বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন দিপক চাহার। ইনিংসের ৪৩তম ওভারে বোলিংয়ে এসে আবারও বাংলাদেশকে সাফল্য এনে দেন সাকিব আল হাসান। বোলিংয়ে এসে শার্দুল ঠাকুরের উইকেট তুলে নেন সাকিব। সাকিবকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হন শার্দুল ঠাকুর। তার বিদায়ের পর ক্রিজে আসেন চোট পাওয়া অধিনায়ক রোহিত শর্মা।
এরপর ইনিংসের ৫৬তম ওভারে বোলিংয়ে এসে নিজের তৃতীয় উইকেট তুলে নেন পেসার এবাদত। দলীয় ২১৩ রানে পুল করতে গিয়ে শান্তর হাতে ধরা পড়েন দিপক চাহার। ১৮ বলে ১১ রান করে আউট হন তিনি। এরপর ওভারের তৃতীয় ও পঞ্চম বলে এবাদতকে ছক্কা হাঁকান রোহিত শর্মা। শেষ বলে চার মেরে ওভার শেষ করেন তিনি।
ইনিংসের ৪৭তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন মিরাজ। তবে ইনজুরির কারণে এক বলে করে ওভার শেষ না করেই মাঠ ছাড়েন তিনি। তার পরিবর্তে বল করতে আসেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। পাঁচ বল করে মাত্র ১ রান দেন মাহমুদুল্লাহ। জয়ের জন্য শেষ তিন ৩ ওভারে ৪০ রান প্রয়োজন হয় ভারতের।
ইনিংসের ৪৮তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন মোস্তাফিজুর রহমান। এই ওভার মেডেন করেন তিনি। ফলে শেষ দুই ওভারে জয়ের জন্য ৪০ রান প্রয়োজন হয় ভারতের।
ইনিংসের ৪৯তম ওভারে বোলিংয়ে আসেন মাহমুদুল্লাহ। ওভারের প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকান রোহিত। পরের বলে ওয়াইডের সঙ্গে বাই দুই রান নেয় ভারত। ওভারের দ্বিতীয় বলে ক্যাচ উঠলেও তা ছেড়ে দেন এবাদত। ওভারের তৃতীয় বলে আবারও ছক্কা হাঁকান রোহিত। ওভারের চতুর্থ বলে দুই রান নেন তিনি। ওভারের পঞ্চম বলে ক্যাচ উঠলে আবারও তা ছেড়ে দেন বিজয়। তবে শেষ বলে সিরাজকে বোল্ড করেন মাহমুদুল্লাহ।
শেষ ওভারে জয়ের জন্য ২০ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। শেষ ওভারে বোলিংয়ে আসেন মোস্তাফিজুর। প্রথম বল ডট দিয়ে দ্বিতীয় বলে চার মারেন রোহিত। ওভারের তৃতীয় বলে ফের চার মারেন রোহিত। শেষ তিন বলে ১২ রান প্রয়োজন ছিল ভারতের। ওভারের চতুর্থ বল ডট করেন মোস্তাফিজ। এরপর ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকান রোহিত। শেষ বলে ছয় রান প্রয়োজন হয় ভারতের। তবে শেষ বলে মাত্র এক রান দিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করে মোস্তাফিজ। শেষ পর্যন্ত ৫ রানের জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ।
রোহিত শর্মা ২৮ বলে ৫১ রান করে অপরাজিত থাকেন। আর বাংলাদেশের পক্ষে এবাদত হোসেন নেন সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট। আর সাকিব ও মিরাজ নেন ২টি করে উইকেট।