সোমবার বিকাল ৩:০৯, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

৬৪ জেলা থেকে করা যাবে ই-পাসপোর্ট

বিভাগ অর্থনীতি, 27 June, 2019.

ঢাকা ব্যুরো: জুলাই থেকে মিলবে বহুল কাঙ্ক্ষিত ই-পাসপোর্ট। তবে এখনো নির্ধারণ করা হয়নি ফি। দেশের যেসব জায়গায় মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) আবেদন করা যায় সেখানেই ই-পাসপোর্টের আবেদন করা যাবে বলে জানায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ই-পাসপোর্টের আওতায় আসবে দেশের ৬৪ জেলা।

সূত্র জানায়, পাঁচ ও ১০ বছর মেয়াদি হবে এ পাসপোর্ট। মেয়াদ ও ফি নির্ধারণ নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একের পর এক বৈঠক করছে। ফি নির্ধারণ কমিটির প্রস্তাবে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ছয় হাজার (২১ দিন), এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১২ হাজার (সাত দিন) ও সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১৫ হাজার টাকা (এক দিন) প্রস্তাব করা হয়েছে।

এছাড়া দুই ক্যাটাগরির পাসপোর্ট থাকছে। একটি ৪৮ পৃষ্ঠার, আরেকটি ৭২ পৃষ্ঠার। যারা ৭২ পৃষ্ঠার পাসপোর্ট নেবে তাদের ক্ষেত্রে ফিও বেশি হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় সুরক্ষা সেবা বিভাগ। মন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হবে।

সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান বলেন, জুলাই থেকে মিলবে ই-পাসপোর্ট। তবে এখনো ফি চূড়ান্ত করা হয়নি। ফি নির্ধারণের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে আছে। মন্ত্রী মহোদয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।

কোথায় ই-পাসপোর্টের আবেদন করা যাবে এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, যেখানেই এমআরপি পাসপোর্টের আবেদন করা যায় সেখানেই ই-পাসপোর্টের আবেদন করা যাবে।

‘বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট ও স্বয়ংক্রিয় বর্ডার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে। প্রযুক্তিনির্ভর ই-পাসপোর্টের আওতায় আসছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় চার হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে জুলাই ২০১৮ থেকে জুন ২০২৮ সালে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর। ১০ বছরে মোট ৩০ মিলিয়ন পাসপোর্ট তৈরি করা হবে। এর মধ্যে দুই মিলিয়ন তৈরি হবে জার্মানিতে। ফলে প্রথমে যারা আবেদন করবেন তাদের পাসপোর্ট জার্মানি থেকে তৈরি হয়ে আসবে। পাঁচ ও ১০ বছর মেয়াদি হবে পাসপোর্ট।

সুরক্ষা সেবা বিভাগের সিনিয়র সহকারী প্রধান (পরিকল্পনা-১) শিরিন আখতার  বলেন, স্বল্পসময়ে ই-পাসপোর্ট পাওয়া যাবে। তবে ১৮ বছরের নিচে ও ৬০ বছরের উপরে বয়স হলে পাঁচবছর মেয়াদি পাসপোর্ট দেওয়া হবে। নিরাপত্তাজনিত কারণেই শিশুদের পাঁচবছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট দেওয়া হবে। কারণ পরবর্তী সময়ে ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলবে না। ফলে নানা দেশের এয়ারপোর্টে জটিলতা তৈরি হবে। বিশ্বের অন্য দেশ যেভাবে ই-পাসপোর্টের নিয়ম ফলো করে আমরাও করবো। সেই ধারাবাহিকতায় ৬০ বছরের উপরে বয়স হলে মিলবে পাঁচবছর মেয়াদি ই-পাসপোর্ট।

বর্তমান বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্টের নিরাপত্তা সম্বলিত মোট ৩০ মিলিয়ন ই-পাসপোর্ট তৈরি করা হবে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার ২০১০ সালে রিডেবল পাসপোর্ট ও মেশিন রিডেবল ভিসা সিস্টেম প্রবর্তন করে। কিন্তু চলমান এমআরপি ব্যবস্থায় পাসপোর্টের জালিয়াতির সম্ভাবনা ও দশ আঙুলের ছাপ ডাটাবেজে সংরক্ষণ না থাকায় এ সিস্টেমটির দুর্বলতার সুযোগে একাধিক পাসপোর্ট করার প্রবণতা ধরা পড়েছে। যার ফলে ই-পাসপোর্ট কার্যক্রমটি চালু করার প্রয়োজন বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে বহির্বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সবশেষ উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন ই-পাসপোর্ট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ই-পাসপোর্টের মাধ্যমে খুব সহজেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করা যায়। গুরুত্বপূর্ণ চেক পয়েন্টগুলোতে অটোমেটেড বর্ডার কন্ট্রোল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালুর লক্ষ্যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের চেয়ে ই-পাসপোর্ট অধিক নিরাপদ ও সুরক্ষিত হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ই-পাসপোর্ট চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যেই বিশ্বের ১১৯টি দেশে ই-পাসপোর্ট ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশে ই-পাসপোর্ট চালু করতে প্রধানমন্ত্রীর জার্মানি সফরের সময় জার্মানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভেরিডসের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সমঝোতা স্মারক সই করেন। এর মধ্যে দুই মিলিয়ন জার্মানির ভেরিডস কোম্পানি তৈরি করে দেবে। পাশাপাশি আমাদের দেশের টেকনিশিয়ানদের তারা প্রশিক্ষণ দেবে। যাতে বাকি ২৮ মিলিয়ন ই-পাসপোর্ট আমাদের দেশের নিজস্ব কারিগররা তৈরি করতে পারে। প্রকল্পের আওতায় এয়ারপোর্টে ই-গেট তৈরি করা হয়েছে।

প্রকল্পটি পরিকল্পনা বিভাগে দেখভাল করছেন আর্থ-সামাজিক বিভাগের উপ-প্রধান বোরহানুল হক। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি সঠিক সময়েই বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ৩০ মিলিয়ন ই-পাসপোর্ট তৈরি হবে। সময়-ব্যয় কিছুই বাড়েনি। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই চাহিদা অনুযায়ী নেওয়া হবে নতুন প্রকল্প।

ই-পাসপোর্ট একটি বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট। এতে একটি এমবেডেড ইলেকট্রনিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ থাকবে। এই চিপে পাসপোর্টধারীর বায়োগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক (ছবি, আঙুলের ছাপ ও চোখের মণি) তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। আর ই-পাসপোর্টের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে পিকেডিতে (পাবলিক কি ডাইরেক্টরি)। আন্তর্জাতিক এ তথ্যভাণ্ডার পরিচালনা করে ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশন (আইসিএও)। ইন্টারপোলসহ বিশ্বের সব বিমান ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এ তথ্যভাণ্ডারে ঢুকে তথ্য যাচাই করতে পারবে। ফলে পাসপোর্ট নিয়ে জালিয়াতি কঠিন হবে না। এমআরপি ও ই-পাসপোর্ট একই ডাটাবেজে হবে। ই-পাসপোর্টে নিরাপত্তার বিষয়টি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।

সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামান বলেন, ই-পাসপোর্টে নিরাপত্তার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তিনির্ভর ই-পাসপোর্টের আওতায় আসছে বাংলাদেশ।