সোমবার দুপুর ২:১৬, ৯ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ. ২৩শে ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং

মজুদ কম ও ভারতে বন্যায় বেড়েছে পেঁয়াজের দাম

বিভাগ অর্থনীতি, 1 September, 2019.

ঢাকা ব্যুরো: দেশের আড়তগুলোতে মজুদ কমে যাওয়ায় ও ভারতে বন্যার প্রভাবে বেড়েছে পেঁয়াজের ঝাঁজ। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম পাইকারিতে ১০ টাকা আর খুচরায় বেড়েছে ২৫ টাকা।

পাইকারিতে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ মানভেদে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা, আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৩৮ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা দেশিতে খুচরায় বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৫৫ থেকে ৭০ টাকা, আর আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা।

এদিকে বাজারে এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই। ক্রেতারা বলেন, সরকারের মনিটরিং ব্যবস্থা ভালো থাকলে কয়েকদিন পরপর পেঁয়াজের দামে উত্থান-পতন হতো না। নিন্মআয়ের মানুষের যত জ্বালা। আর ব্যবসায়ীরা বলেন, আমরা ভাই বেশি দামে কিনি, বেশি দামে বিক্রি করি। পাইকারি বাজারের সঙ্গে আমাদের দামের ব্যবধান একটু বেশিই থাকে। কারণ পেঁয়াজ কেনার পর আমাদের ঘাটতি যায়। আনা নেওয়ার খরচসহ বিভিন্ন খরচ রয়েছে, ফলে দাম একটু বেশিই পড়ে।

শনিবার রাজধানীর পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা এক পাল্লা (৫ কেজি) দেশি পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি করছেন ১৯০ থেকে ২২৫ টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা। যা ঈদের আগে বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সে হিসেবে কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ টাকা। আমদানিকৃত প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) পেঁয়াজ মানভেদে ১৯০ থেকে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে প্রতিকেজির দাম ৩৮ থেকে ৪২ টাকা। যা ঈদের আগে বিক্রি হয়েছিল ২৮ থেকে ৩০ টাকা। সে হিসেবে দাম বেড়েছে ১২ টাকা।

এদিকে খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মানভেদে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৭০ টাকা। যা আগস্টের প্রথম সপ্তাহ অর্থাৎ ঈদের আগে বিক্রি হয়েছিল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। সে হিসেবে দেশি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৫ টাকা। আর আমদানিকৃত ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। যা ঈদের আগে বিক্রি হয়েছিল ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। সে হিসেবে প্রতিকেজি পিঁয়াজের দাম বেড়েছে ২৫ টাকা।

শ্যামবাজারের মেসার্স আলী ট্রেডার্সের ম্যানেজার শামসুর রহমান বলেন, গত ১৫ দিনে পেঁয়াজের দাম পাইকারি বাজারে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে তিনি জানান, ভারতে হঠাৎ বন্যা হওয়ায় সেখানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। ফলে এলসি করতে হচ্ছে চড়া দামে। আর দেশের পেঁয়াজের মজুদ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আশা করছি মিয়ানমার ও তুরস্কের পেঁয়াজ আসা শুরু করলে দাম স্বাভাবিক হবে।

সততা এন্টারপ্রাইজের সুভাষ বসাক বলেন, দেশের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। এ বছর পেঁয়াজ ওঠানোর সময় শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এতে কৃষকের মজুদের প্রায় অর্ধেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে ভারতে বন্যায় এলসিতে দাম বেড়ে গেছে। সেই প্রভাব দেশের বাজারে পড়েছে। আমদানি না বাড়া পর্যন্ত দাম সহসা কমবে না। মিয়ানমার ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজের জন্য এলসি করা হয়েছে। সেটা এলে দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। তবে তা আসতে সময় লাগবে অন্তত এক মাস। ফলে এক মাস আগে পেঁয়াজের দাম কমছে না।

এদিকে সূত্রাপুর, নয়াবাজার, দয়াগঞ্জ বাজার, ধূপখোলা মাঠ, শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছেন ৫৫ থেকে ৭০ টাকায়। আর ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।

পেঁয়াজের বাড়তি দামের বিষয়ে সূত্রাপর বাজারের বলরাম দাস বলেন, দেশি পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। এবার মজুদ করা অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে ভারতে বন্যায় এই মৌসুমের পেঁয়াজ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ভারত দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এজন্য পেঁয়াজ কম আসছে। পাইকারিতে দাম বাড়ার কারণে আমাদের বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা ইমন সারোওয়ার বলেন, সরকারের মনিটরিং দুর্বল দেখে ব্যবসায়ীরা যখন খুশি তখন দাম বাড়িয়ে দেন। এবছর বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছিল। এটা সরকারের মাথায় রাখা উচিত ছিল। আগে থেকেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কথা বলে আমদানির ব্যবস্থা নিতে পারতো। কিন্তু সরকার সেটা করতে পারেনি। ফলে এর খেসারত দিতে হচ্ছে আমাদের মতো নিন্মআয়ের মানুষদের।

বাজারে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজ আমদানি নির্ভর পণ্য। ভারতের বন্যার কারণে ১২ টাকা কেজির পেঁয়াজ ২৫ টাকা হয়ে গেছে। সেই প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে পড়ে। তবে যে পরিমাণে দাম বাড়ানো হয়েছে তাতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে না। ঈদের ১৫ দিন আগে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায়। তখন আমাদের তদারকিতে দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এখনও বাজারে মনিটরিং চলছে। আশা করছি পেঁয়াজের দাম নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা তৈরি হবে না।

এদিকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে অনুমোদন ছাড়াই পণ্য সংগ্রহ করে ন্যায্যমূল্যে যাতে বিক্রি করতে পারে সেজন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) বাজারের ঘাটতি পূরণে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নিত্যপণ্য ক্রয়ে অনুমোদন দিয়েছে সরকার। তাৎক্ষণিকভাবে চাহিদা মেটাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।