করোনা ভাইরাসে লণ্ডভণ্ড ক্রীড়া বিশ্ব
স্পোর্টস রিপোর্ট: চীনের উহানে যে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল তা এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছে সারা বিশ্বে। গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের কারণে থমকে গেছে জন-জীবন। প্রাণ হারিয়েছে ৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। আক্রান্তের সংখ্যাও লাখের কাছাকাছি। যার কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ইতোমধ্যে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করেছে।
চীনের পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও ইরান ও ইতালিতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে করোনা ভাইরাস। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অন্যান্য দেশেও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
জন-জীবন যেখানে পর্যুদস্ত সেখানে বাদ যায়নি ক্রীড়া বিশ্বও। দ্রুতই একের পর এক ক্রীড়া যজ্ঞ স্থগিত হয়েছে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে। ফুটবল-ক্রিকেট-টেনিস-ম্যারাথন-সাইক্লিং-ফর্মূলা ওয়ান-গলফ-বাস্কেটবল-রাগবি থেকে শুরু করে সব ক্রীড়া ইভেন্টই সাময়িকভাবে বাকিল ঘোষণা করা হয়েছে।
তার মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন কয়েকজন ক্রীড়া ব্যক্তিত্বও। জুভেন্টাসের ইতালিয়ান সেন্টার-ব্যাক দেনিয়েল রুগানি কোভিড-১৯ পজিটিভ হওয়ার দু’দিন গত না হতেই ফুটবল বিশ্বের জন্য দুঃসংবাদ হয়ে আসে আর্সেনালের কোচ মাইকেল আর্তেতার আক্রান্ত হওয়ার খবর। তার মধ্যে শোনা যায়, চেলসির ইংলিশ উইঙ্গার কলাম হাডসন-ওডোই করোনা ভাইরাস পজিটিভ।
অবশেষে এমন পরিস্থিতিতে সব ক্লাবের সঙ্গে মিটিং শেষে ৪ এপ্রিল পযর্ন্ত ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ স্থগিত করা হয়েছে। কেবল বিভিন্ন স্তরের ফুটবল নয়, আপাতত সব ধরনের ক্রীড়া ইভেন্ট বন্ধ রয়েছে গ্রেট ব্রিটেনে।
শুক্রবার (১৩ মার্চ) যজ্ঞ করে যেন বন্ধ হয়েছে ক্রীড়া ইভেন্ট। এতদিন ঢিমেতালে-মাঝেসাঝে কয়েকটা ম্যাচ রুদ্ধদুয়ারে চললেও একে একে স্থগিত হয়েছে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান, জার্মান বুন্দেসলিগা। এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত হয়েছে চলতি চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপা লিগের ম্যাচগুলো।
যার কারণে চ্যাম্পিয়নস লিগে আগামী সপ্তাহে সময়সূচি থাকলেও রিয়াল মাদ্রিদ-ম্যানচেস্টার সিটি, জুভেন্টাস-লিঁও, বার্সেলোনা-নাপোলি, বায়ার্ন মিউনিখ-চেলসি’র ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে। একই ফল বরণ করতে হবে ইউরোপ লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-লাস্কের ম্যাচেও।
এর আগে দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয় ইতালিয়ান সিরি’আ ও স্প্যানিশ লা লিগার ম্যাচ। তার মধ্যে নিজ দলের মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় দুই সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টাইনে আছে জুভেন্টাসের পুরো স্কোয়াড। নিজ বাড়ি পর্তুগালে গিয়ে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন তুরিন ফরোয়ার্ড ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। জুভদের মতো দুই সপ্তাহের জন্য কোয়ারেন্টাইনে আছে রিয়াল মাদ্রিদের সব খেলোয়াড়।
কেবল ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগ নয়, ডাচ ইরেদিভিসি, পর্তুগালের প্রিমেরা লিগ, যুক্তরাষ্ট্রের মেজর সকার লিগও স্থগিত রয়েছে। করোনার কারণে আগামী বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের প্রথম ম্যাচে ঠিক সময়ে মাঠে নামা হচ্ছে না ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা-সহ লাতিন ফুটবল বিশ্বের দেশগুলোর। এশিয়া অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাই এবং ইউরো-২০২০ বাছাইও স্থগিত করেছে ফিফা।
ক্রিকেটেও নেমে এসেছে স্থবিরতা। পাকিস্তান সুপার লিগ (পিএসএল) রুদ্ধদুয়ারে চললেও বিদেশি খেলোয়াড়রা ফিরে গেছেন নিজ দেশে। ১৫ এপ্রিল পযর্ন্ত স্থগিত হয়েছে আইপিএলের (ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ) আসর।
মহামারী করোনা ভাইরাসের দিনগুলোতে যেন স্থগিত অধ্যায় চলছে পুরো বিশ্বে। সিরিজের মাঝপথে অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে দেশে ফিরে গেছে নিউজিল্যান্ড। দু’দলের তিন ওয়ানডে সিরিজে দর্শকবিহীন প্রথম ম্যাচে অবশ্য হার বরণ করতে হয়েছে কেন উইলিয়ামসদের। স্থগিত হয়েছে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজও।
বাংলাদেশের অবস্থা অবশ্য ভিন্ন এ সময়। করোনা ভাইরাস এখনও তেমন হানা দেয়নি দেশের বড় ক্রীড়া ইভেন্টগুলোতেও। চলমান রয়েছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের চলতি আসর। চলছে মেয়েদের ফুটবল লিগও। তবে এশিয়া অঞ্চলের কাতার বিশ্বকাপ বাছাই স্থগিত করায় ২৬ মার্চ আফগানিস্তানের মুখোমুখি হওয়া হচ্ছে না বাংলাদেশের।
শঙ্কা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের পাকিস্তান সফর নিয়েও। তৃতীয় ধাপে বাকি এক টেস্ট ও এক ওয়ানডে খেলার কথা রয়েছে টাইগারদের। সম্প্রতি তামিম ইকবাল-মুশফিকুর রহিমরা জিম্বাবুয়েকে ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে হোয়াইটওয়াশ করেছে। তবে দুই টি-টোয়েন্টি সিরিজে দেখা যায়নি দর্শক উন্মাদনা। করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে ম্যাচ দু’টিতে টিকেট বিক্রি বন্ধ রাখে বিসিবি।
এছাড়া দেশের বিভিন্নস্থানে হওয়ার কথা থাকলেও করোনা ভাইরাসের সাবধানতাবশত শুরু হতে যাওয়া ডিপিএলের (ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ) সব ম্যাচ সরিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে ঢাকায়। তবে স্থগিত হয়েছে ঘরোয়া ক্রীড়াঙ্গানের সবচেয়ে বড় আসর বাংলাদেশ গেমস।
করোনা ভাইরাসের এমন ভয়াবহতা চলতে থাকলে আসন্ন টোকিও অলিম্পিকও স্থগিত হতে পারে। সেই আশঙ্কা অনেকদিন ধরে হচ্ছে জাপানে। এমনকি সম্ভাব্য স্থগিতের তালিকায় আছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও।